নেপালে জেন জি’দের পাঁচ দাবি, এক প্রস্তাব

নেপালে গত তিন দিন ধরে চলমান সহিংসতা দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অশান্তির রূপ নিয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় রূপান্তরিত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম বা জেন জি নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভের নেতারা বলছেন তাদের আন্দোলন সুযোগসন্ধানীদের দ্বারা ‘ছিনতাই’ করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) জেন জি বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবিগুলো স্পষ্ট করতে একটি ভার্চুয়াল সভা করেন। তাদের মূল দাবিগুলো হলো:

  • হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা: ২০০৮ সালের আগে নেপাল ছিল হিন্দু রাষ্ট্র। বিক্ষোভকারীদের একাংশ এই অবস্থানে ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে, যদিও এটি মূলধারার দাবি নয়।
  • কে পি শর্মা ওলির গ্রেপ্তার: দুর্নীতি ও সহিংস দমন-পীড়নের অভিযোগে ওলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি।
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ: কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
  • দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অবসান: রাজনীতিবিদদের সম্পদের স্বচ্ছ তদন্ত এবং তরুণদের জন্য শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ।
  • বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
  • সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার: কার্কির নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠনের প্রস্তাব।

বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি রেহান রাজ দঙ্গল জানিয়েছেন, তারা সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। সুশীলা কার্কি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম ও একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।

চার সেপ্টেম্বর থেকে নেপাল সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার পর থেকে তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং রাজনীতিবিদদের বিলাসী জীবনযাত্রার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আট সেপ্টেম্বর থেকে হাজার হাজার তরুণ কাঠমান্ডু ও অন্য শহরে রাস্তায় নেমে আসেন। সরকার এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও বিক্ষোভ থামেনি।

৯ সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, যখন বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই দিন প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। সেনাবাহিনী কাঠমান্ডুতে নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন নিহত এবং ৪০০-এর বেশি আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছে। জেন জি নেতারা সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে শান্তি পুনরুদ্ধার এবং এক বছরের মধ্যে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছেন। তবে, জেল থেকে সাত হাজারের বেশি বন্দী পালানো এবং চলমান অগ্নিসংযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

ভারত সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং ভারতীয় এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বাতিল করেছে। জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে। পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল এবং আগামী দিনগুলোতে কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

Related Articles

Back to top button