ডাকসু নির্বাচন: নারী ভোটারদের গণহারে উপস্থিতি নিয়ে সংশয়

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতির দিকেই নজর এখন হেভিওয়েট প্রার্থীদের। তাদের কারও কারও আশঙ্কা, নারী ভোটারদের বেশি সংখ্যায় কেন্দ্রে আনা কঠিন হতে পারে। ভোটকেন্দ্র নতুনভাবে বিন্যস্ত করার দাবি করেছেন তারা। অন্যদিকে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঠাঁই পাবে না বলে মনে করেন ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী। রোববার শেষ হবে নির্বাচনী প্রচারণা।
শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় সকালের দিকে অনেকটাই নিরুত্তাপ ছিল ডাকসুর নির্বাচনী মাঠ। শেষ সময়ে নানান কৌশলে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টায় প্রার্থীরা। লিফলেট আর হ্যান্ডবিল নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকায়, প্রচারণার কেন্দ্র ছিল আবাসিক হলগুলো।
দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বাড়লে প্রচারণাও বাড়তে থাকে। দীর্ঘ দিন পর হল সংসদের প্রতিনিধির কাছে ভোটাররাও তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।প্রার্থীরাও নানা আশ্বাস দেন। বলেন, শিক্ষার্থীদের ম্যানডেট পেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগও উঠে আসে অনেকের মন্তব্যে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ শুরু করেন ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা। এসময় বিন ইয়ামিন অভিযোগ করেন, অনেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শিক্ষার্থীদের উপঢৌকন দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন।
এরপর বেলা ১২টায় হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। আবিদুল ইসলাম জানান, নির্বাচিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে কাজ করে যাবেন নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য।
সকলের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করবে তাদেরকেই নির্বাচনে বিজয়ী করা উচিত বলে মনে করেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের এই ভিপি প্রার্থী। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গোটা দেশকে যেভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কোন পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলেও আশা করেন তিনি।
সিনেট ভবনের সামনে প্রচারণার সময় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে ভোট চাইতে যাচ্ছিলেন, কয়েকজন সাংবাদিক ছবি উঠাতে চাইলে তিনি না উঠানোর অনুরোধ করেন। তিনি মনে করেন এটি শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেন না।
এত দিন দল বেঁধে প্রচারণা চালালেও আজ থেকে ভোটারদের কাছে একাই যাচ্ছেন প্রার্থীরা। সর্বোচ্চ এক-দুইজনকে সঙ্গে নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা কোনও কারণে বিরক্ত হতে পারেন এমন আচরণ থেকে তারা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। কারণ দলবদ্ধ প্রচারণা বা ছবি-ভিডিও করার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেন না।
দুপুরে ক্যাম্পাসের টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, কলা ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, ডাকসু চত্বর, মল চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। লিফলেট বিতরণের ক্ষেত্রেও থাকছেন সর্বোচ্চ তিন-চারজন।
নারী ভোটারদের ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে ভোটকেন্দ্র নতুন করে বিন্যস্ত করার দাবি জানিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। ডাকসু নির্বাচন কমিশন অপেশাদার আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ এই ভিপি প্রার্থী।
বিজয় একাত্তর হলের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আবু সাদিক কায়েম বলেন, অনেকগুলো বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে, এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অপেশাদার আচরণ। আমরা অনেকগুলো অভিযোগ দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, প্রথম যেদিন প্রচারণা শুরু হয় সেদিন আমাদের নারী প্রার্থী সাবিকুন্নাহার তামান্নার ছবি বিকৃত করা হয়েছে, দুই সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় পরবর্তীতে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
কায়েম বলেন, বিভিন্ন জায়গা দেখতে পেয়েছি, কিছু প্রার্থী বহিরাগত দিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পেইন করতে। সবার ইশতেহারে আছে, আমরা এ ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে চাই। নিরাপদ ক্যাম্পাসে যদি আমরা বহিরাগত নিয়ে এসে প্রচারণা করি তাহলে এটা এক ধরনের সাংঘর্ষিক অবস্থান। এ রকম একটা অবস্থা।
নারী ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, নারীদের ভোটকেন্দ্রে আনা বড় চ্যালেঞ্জ। এবার ৪৭ শতাংশ ছাত্রী ভোটারই ডাকসুর গতিমুখ নির্ধারণ করবেন। তাঁরাই ডাকসুতে ব্যবধান গড়ে দেবেন।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে প্রচারকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়েরা সহজে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হন না। মেয়েদের একটা যুক্তিসংগত চিন্তা থাকে। স্বাধীনচেতা হয়ে ছাত্রীরা ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফলে এবার ৪৭ শতাংশ ছাত্রী ভোটার আসলে কোথায় ভোট দিচ্ছেন, সেটির ওপরে নির্ভর করবে ডাকসুর গতিমুখ। তিনি বলেন, আমি মনে করি, মেয়েরাই এবার ডাকসুতে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার বড় ফ্যাক্টর।
ছাত্রীদের ভোটকেন্দ্রে আনা চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে উমামা বলেন, মেয়েদের ভোট আনার প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো অনেকেই বাসায় চলে গেছেন। অনেকের আবার পরীক্ষার প্রস্তুতি ছুটি চলছে। অনেকে ডাকসুকে শুধুই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চিন্তা করেন। এ জন্য মেয়েদের মধ্যে ভোট দিতে অনাগ্রহ কাজ করে।
তিনি বলেন, আবার অনেকের পরিবার থেকে ফোন করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি মেয়েদের ভোট কেন্দ্রে আনা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার মেয়েদের ভোটকেন্দ্র হল থেকে দূরে দূরে রাখা হয়েছে। এতে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কমবে।
উমামা ফাতেমা বলেন, ছাত্রীরা সবাই যদি ভোট দিতে আসেন, তাহলে ভোটার অংশগ্রহণ ৩৫ হাজারের বেশি হয়ে যাবে। আশা করি, মেয়েরা গণহারে ভোট দিতে আসবেন। আমরা তাঁদের উৎসাহিত করছি।
৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। যার মধ্যে ছাত্রী ভোটার রয়েছে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন।










