হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের কথা আগেই জানত ভারত: জয়শঙ্কর

জুলাই-আগস্টে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে ভারত অবগত ছিলো, তবে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীেক পরামর্শ দেয়া ছাড়া ভারতে আর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যদের একথা জানান তিনি।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই বাংলাদেশে হাসিনাবিরোধী জনরোষ তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়টি ভারত সরকার আগেই অবগত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যদের জয়শঙ্কর বলেছেন, আগে থেকে জানতে পারলেও এ বিষয়ে বিশেষ ‘কিছু করার মত অবস্থানে’ ভারত ছিল না, কারণ শেখ হাসিনার ওপর তাদের ‘যথেষ্ট প্রভাব ছিল না’ এবং তাকে কেবল ‘পরামর্শ’ দেওয়ার সুযোগ ছিল।
বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীনসহ ভারতের সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের স্বার্থের কী ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে সংসদীয় কমিটিকে অবহিত করেন এস জয়শঙ্কর। পররাষ্ট্র বিষয়ক সেই পরামর্শক কমিটিতে শুধু ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্যরাই ছিলেন।
সেখানে এস জয়শঙ্কর বলেছেন, হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে ভারত অবগত ছিল, কিন্তু হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। পাশাপাশি, ভারতের পক্ষে তেমন কিছু করতে না পারার আরেকটি কারণ, শেখ হাসিনার ওপর তাদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল না। তাকে শুধু ‘পরামর্শ’ দেয়া যেতো জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যরা ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য জয়শঙ্করের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর- বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, জাতিসংঘসহ ভারতের মত আরও কয়েকটি পক্ষ বাংলাদেশ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতো বলে জানান এস জয়শঙ্কর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী মিশন নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বক্তব্যও সত্য বলে জানান তিনি।
জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন, আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের মত ভারতও বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। আলোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রসঙ্গও টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
তুর্কের মন্তব্যে দাবি করা হয়, হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল। বলা হয়েছিল, এ ধরনের পদক্ষেপ জাতিসংঘকে সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করতে উৎসাহিত করবে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেও শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেওয়ায় ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে উত্তেজনা রয়ে গেছে। মোদী–ইউনূস বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ বিবেচনা করা হচ্ছে।
জয়শঙ্কর সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে বলেছেন, বঙ্গোপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক আয়োজনে বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ইউনূস-মোদীর মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনার জন্য ঢাকা বুধবার ভারতকে কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছে। এই চিঠি জবাব এখনও দেয়নি দিল্লি। এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে দু’নেতার মধ্যে বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল।
তবে সে সময় তাঁদের বৈঠক হয়নি। এবার ব্যাংককে বৈঠক হলে এটিই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক।
বৈঠকে কয়েকজন সংসদ সদস্য ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায়’ উদ্বেগ জানান। এসব ঘটনায় ভারত কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চান তাঁরা। জবাবে জয়শঙ্কর জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাগুলোর কারণ রাজনৈতিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়ায় নয়।
বৈঠকে কংগ্রেসের সংসদ সদস্য কে সি বেনুগোপাল ও মনীশ তিওয়ারি, শিবসেনা-ইউবিটির সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদি, কংগ্রেসের মুকুল ওয়াসনিকসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিশানা করে হত্যা’র অভিযোগের বিষয়টি তোলেন।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে এ বিষয় তুলে ধরেছে। ভারত সরকার এ নিয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পরবর্তী কোনো এক দিন পাকিস্তান ও চীন বিষয়ে পৃথকভাবে কথা বলবেন তিনি।
তবে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে এবং এ জন্য ভারত বিমসটেককে (দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।