নেপালে মারধরের শিকার এক বাংলাদেশি পরিবার, ৩০ জনকে উদ্ধার

নেপালে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মারধর ও লুটের শিকার হয়েছে এক বাংলাদেশি পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। আতঙ্কগ্রস্ত পরিবারটিকে আজ বুধবার রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস।

কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপমিশন প্রধান মো. শোয়েব আবদুল্লাহ  এসব তথ্য জানান।

কাঠমান্ডু থেকে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আজ বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১০ জন এবং শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ২০ জনসহ মোট ৩০ জনকে উদ্ধার করেছে দূতাবাস। তাঁরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মঙ্গলবারের (৯ সেপ্টেম্বর) যাত্রী ছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করে বিমানের নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিমানের অন্য যাত্রীদের বিমান সরাসরিই দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার নেপালের একটি পাঁচ তারকা হোটেল পুরো পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আর হায়াত রিজেন্সি হোটেল নামের আরেকটি পাঁচ তারকা হোটেলে ভাঙচুর চালান। সেই হোটেলে তিন সদস্যের এক বাংলাদেশি পরিবার ছিল। পরিবারটি মারধর ও লুটের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল পর্যটকদের বহনকারী একটি গাড়ি বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে যায়। বাসের চালক ভয় পেয়ে গেলে গাড়িটি বিক্ষোভকারীদের ওপর ওঠে যায়। সে সময় বিক্ষোভকারীরা গাড়িটি পুড়িয়ে দিয়েছেন। গাড়িটিতে এক বাংলাদেশি তরুণী ছিলেন। তবে তিনি সুস্থ আছেন।

আক্রান্ত পরিবারটির সম্পর্কে জানতে চাইলে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপমিশন প্রধান মো. শোয়েব আবদুল্লাহ  বলেন, এক ছেলেকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি বাংলাদেশি পরিবার হায়াত রিজেন্সি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। বিক্ষোভকারীরা হোটেলটিতে প্রবেশের পর পরিবারটি তাদের পাসপোর্ট লুকানোর চেষ্টা করছিল। বিক্ষোভকারীরা তাদের কক্ষের দরজা ভেঙে তাদের মারধর করে ও জিনিসপত্র লুট করে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং অন্য একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে। কিন্তু পরিবারটি এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে তারা অন্য হোটেল থাকতে চাচ্ছিল না। পরে আজ তাদের দূতাবাসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের পুনরায় চিকিৎসা দেওয়ার পর রাষ্ট্রদূতের বাসায় রাখা হয়।

জাতীয় ফুটবল দল এবং শিক্ষাসফরে যাওয়া ডিফেন্স কলেজের ৫১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্পর্কে জানতে চাইলে শোয়েব আবদুল্লাহ জানান, বাংলাদেশ ফুটবল দলকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া গেছে। আশা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার সকালে ফ্লাইটটি কাঠমান্ডু এসে পৌঁছাবে। যেহেতু ফ্লাইট আবারও শুরু হয়েছে, ফলে ডিফেন্স কলেজের প্রতিনিধিরা নিয়মিত ফ্লাইটে ফেরত যাবেন। বিগত দিনের ফ্লাইট বাতিল হওয়া যাত্রীদের জন্য একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে, সেটি এখনো পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক নেতাদের খুঁজছেন বিক্ষোভকারীরা

দূতাবাস সূত্র জানায়, পুরো নেপালের সব থানা পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লোকজনকে তাঁরা খুঁজছেন। বর্তমানে নেপালজুড়ে কারফিউ চলছে। সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। তবে যেহেতু কোনো সরকার নেই, ফলে একটি অনিশ্চয়তা থেকে গিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, মঙ্গলবার রাতে পোখারা থেকে ১৭ জন বাংলাদেশি কাঠমান্ডুতে এসে পৌঁছায়। তাঁদের টেলিফোনে নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করেছে দূতাবাস। তাঁরা নিরাপদে আছেন। এর বাইরে বর্তমানে আনুমানিক ৪০০ বাংলাদেশি পর্যটক রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিওতে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৫০ জন।

বিক্ষোভকারীরা নেপালের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে আগুন ধরিয় দেন। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৯ সেপ্টেম্বর
বিক্ষোভকারীরা নেপালের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে আগুন ধরিয় দেন। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৯ সেপ্টেম্বরছবি: এএফপি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্রিফিং

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যতক্ষণ না পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, ততক্ষণ আমরা কিছুই করতে পারি না। ঢাকা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলেই তাঁদের ফিরে আসা সম্ভব হবে।’

নেপালে থাকা বাংলাদেশিদের ভারতের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা আছে কি না, চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তা সম্ভব নয়, কারণ তাঁদের কাছে ভারতীয় ভিসা নেই। তবে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলে উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশিরা সেখানে লক্ষ্যবস্তু হননি। নেপালের জনগণের আমাদের প্রতি কোনো ক্ষোভ বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। তারা হোটেলে তাদের রাজনৈতিক নেতাদের খুঁজতে গিয়েছিল। যখন তারা দেখল বাংলাদেশিরা হোটেলে আছে, তখনো তাদের কোনো ক্ষতি করেনি।’

Related Articles

Back to top button