কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে মাদক জুয়া মোবাইল সিন্ডিকেটে চারজন

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন প্রিজন্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (পিআইইউ) সদস্যের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সদ্য মুক্তি পাওয়া এক বন্দীর বরাত দিয়ে জানা গেছে, কারাগারের ভেতরে মাদক ব্যবসা, জুয়া বোর্ড, মোবাইল ফোন বাণিজ্যসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে প্রকাশ্যে। এসবের পেছনে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন পিআইইউ সদস্যরা, বিনিময়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের উৎকোচ।
অভিযোগে বলা হয়, পিআইইউ সদস্য মেহেদী, মাহমুদুল হাসান, মোসারব ও রাসেল শুধু অবৈধ সিন্ডিকেটের নিরাপত্তাই দিচ্ছেন না, বরং চাঁদাবাজিতেও ব্যস্ত রয়েছেন। কারাগারের নিরাপত্তা রক্ষার বদলে তারা পরিণত হয়েছেন অবৈধ বাণিজ্যের গডফাদারে।
জুয়ার বোর্ডের দখল সিন্ডিকেটের হাতে
কারাগারের ভেতরে বিভিন্ন ভবনের নির্দিষ্ট কক্ষে প্রতিদিন বসছে জুয়ার আসর। যেমন—
হিমেল ভবনের ৩য় তলায় বন্দী সোহেল, মাসিক ৮ হাজার টাকা দিয়ে বোর্ড পরিচালনা করেন।
তমাল ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় ইলিয়াস, দেন মাসিক ৬ হাজার টাকা।
একই ভবনের ৪র্থ তলায় কাঞ্চন, দেন ৮ হাজার টাকা।
গাজী ভবনের ৫ম তলায় কামালও মাসিক ৮ হাজার টাকা দেন।
বন্দীদের অভিযোগ, নিয়মিত চাঁদা না দিলে জুয়ার বোর্ড বন্ধ করে দেন পিআইইউ সদস্যরা।
মোবাইল ফোনে বিলাসবহুল জীবন
আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেন মাসিক এক লক্ষ টাকা দিয়ে নির্বিঘ্নে মোবাইল ফোন চালাচ্ছেন।
একইভাবে—
আফজাল নামের এক বন্দী মাসিক ৪০ হাজার টাকা দেন।
হলমার্ক কেলেঙ্কারির তুষার আহমেদ মাসিক ৮০ হাজার টাকা দেন।
এমপি আনার হত্যার আসামি শিমুল ভূঁইয়া মাসিক ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
প্রভাবশালী বন্দীরা নিয়মিত উৎকোচ দিয়ে প্রশাসনের চোখের সামনে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মাদকের রাজত্ব
কারাগারের দেয়ালের বাইরে থেকে ‘বল’ আকারে মাদক ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। কারাগারের ভেতরে মাদক প্রবেশ করছে বাইরের লোকজনের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে, বন্দীদের আত্মীয়স্বজন বলের মতো করে মাদক ছুঁড়ে ভেতরে পাঠান। এরপর কারাগারের একটি সিন্ডিকেট সেই মাদক সংগ্রহ করে। এসব কর্মকাণ্ডে পিআইইউ সদস্যদের নীরব সমর্থন রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা ঘুষ ভাগাভাগি করে নেন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। টাকা পাওয়ার পর কোনো ব্যবস্থা নেন না বলে অভিযোগ বন্দীদের।
জামিন প্রক্রিয়াতেও চাঁদাবাজি
শুধু ভেতরেই নয়, মুক্তির সময় জামিন প্রক্রিয়াতেও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে—পিআইইউ সদস্যরা প্রতি বন্দীর কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা না নিলে জামিনে ‘ক্লিয়ারেন্স’ মেলে না।
নিরাপত্তায় অশনিসংকেত
কারা সূত্র বলছে, দায়িত্ব পালনের বদলে অবৈধ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত পিআইইউ সদস্যরা কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের নিরাপত্তাকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। অনেক কারারক্ষী অভিযোগ করেছেন, তারা যদি এ সিন্ডিকেটের কার্যক্রমে বাধা দেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট তৈরি করে হয়রানি করা হয়।
তদন্তের দাবি
বন্দী, মুক্তিপ্রাপ্ত ও কারা স্টাফদের অভিন্ন দাবি—অভিযুক্ত চার পিআইইউ সদস্যের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কারাগার হয়ে উঠতে পারে বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি।